fbpx

স্টার্টআপ কি ও কিভাবে গড়ে তুলবেন? স্টার্টআপ ব্যবসার সম্পূর্ণ গাইড [২০২৪]

স্টার্টআপ খোলার ইচ্ছা কার না থাকে বলুন তো? আপনি হয়তো আমার মত আপনার বন্ধুদের সাথে নিয়মিত প্ল্যানও করেন স্টার্টআপ খোলার!

কিন্তু, আপনি যদি স্টার্টআপের বিষয়ে কোন কিছু না জেনে শুরু করেন, তবে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

যা নিশ্চয় আপনি বা আপনার বন্ধুরা কেউই চান না।

কাজেই আসুন, দেখে নেই একটি স্টার্টআপ শুরু করতে চাইলে আপনার কী কী করা প্রয়োজন। এই গাইড টি পড়লে আপনি শুরু করার ব্যাপারে সবকিছুই জেনে ফেলবেন। সঙ্গে আরো এক্সটারনাল রিসোর্স ও ম্যাটেরিয়াল দেয়া থাকবে।

তবে চলুন, শুরু করা যাক!

স্টার্টআপ ব্যবসার সম্পূর্ণ গাইড

Table of Contents

স্টার্টআপ কী

স্টার্টআপ বলতে আগে বোঝাত একটি কোম্পানির প্রথম অবস্থাকে।

কিন্তু বর্তমান বিশ্বে, স্টার্টআপ দিয়ে বোঝায় নতুন কোন একটি পণ্য/সেবা বা সাপ্লাই চেইন, যা নতুন জেনারেশনের কোন একটি সমস্যার সমাধান করছে। তবে, পুরনো সংজ্ঞা এখনো ব্যবহৃত হয়, কারণ এই স্টার্টআপ গুলোও সাধারণত প্রথম অবস্থাতেই থাকে, ক্যাপিটাল সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত।

আপনার ব্যবসায়ের আইডিয়াটা স্টার্টআপ কি না, তা বুঝবেন কিভাবে? তিনটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে:

১। আপনার পণ্য বা সেবার আইডিয়াটা কি নতুন?

২। আপনি যে মার্কেট টা নিয়ে কাজ করছেন, সেটা কি নতুন? বা আপনার কাস্টমার দের কাছে কি অন্য কেউ একই পণ্য বিক্রি করছে কি না?

৩। আপনার সাপ্লাই চেইনটি কি নতুন? বা আপনি বর্তমান সাপ্লাই চেইনে কি কোন ইনোভেশন নিয়ে আসছেন?

সাপ্লাই চেইন নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন!

এই তিনটি প্রশ্নের যেকোন একটির উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনার ব্যবসায়ের আইডিয়াটি একটি স্টার্টআপ!

স্টার্টআপ কেন করবেন?

কেন করবেন না?

একটি স্টার্টআপ আপনাকে অনেক সুবিধা এনে দিতে পারে, যা আপনার পার্সোনাল কিংবা প্রোফেশনাল দুইভাবেই সহায়তা করবে।

চলুন দেখে নিই স্টার্টআপ এর সুবিধা গুলো আসলে কী:

১। পার্সোনাল: স্টার্টআপ থেকে যে অর্থ আপনি উপার্জন করবেন, তা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে এনে দিতে পারে আর্থিক স্বচ্ছলতা।

কিংবা আপনি আপনার সত্যিকারের প্যাশনে মনোযোগ দিতে পারবেন! যা হয়তো চাকরি করে করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।

যেমন, আমি আমার নিজের দুটি ছোট স্টার্টআপ দিয়ে আমার ঘোরাঘুরির শখ এবং মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি মেকিং এর শখ পূরণ করেছি, এবং আমি আমার শখের কাজ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থও পেয়েছি! এটা কে না চায় বলুন তো!

২। প্রোফেশনাল: যেকোন একটি স্টার্টআপ আপনাকে এনে দিতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা, যা আপনার প্রোফেশনাল জীবনে পরবর্তীতে কাজে লাগবেই।

আপনি স্টার্টআপ শুরু করলে আপনাকে অর্থ ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে কঠিন ও সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যেসব দক্ষতা যেকোন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভয়াবহ প্রয়োজনীয়।

এছাড়াও, আপনি যদি আমার মত আপনার স্টার্টআপ কে সফলভাবে বিক্রি করে দিতে পারেন, তবে আপনি প্রথম সারির কিছু কোম্পানি এবং ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন, যা অন্য কোন ভাবে পাওয়া একেবারেই অসম্ভব!

স্টার্টআপ এর আইডিয়া: আপনার আইডিয়াটি কী?

স্টার্টআপ করার জন্য সবার প্রথমেই দরকার একটি আইডিয়া, যেটাকে আপনি বিজনেস এ রূপান্তর করবেন।

এখন এই আইডিয়াটা একদম নতুন হতে হবে? হ্যাঁ, আপনি নতুন আইডিয়া দিয়ে স্টার্টআপ করতে পারেন। তারমানে এই না যে পুরোনো আইডিয়া দিয়ে আপনি স্টার্টআপ করতে পারবেন না।

আপনি পুরোনো কোন সেবা বা পণ্য এর সমস্যা বের করে তার সমাধান এর মাধ্যমে একটি স্টার্টআপ করতে পারেন। অথবা বর্তমানে মার্কেটে কোন নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার চেয়ে বেশি সুবিধাজনক বা বেশি কার্যকরী অফার আপনি নিয়ে আসতে পারেন।

তবে, আইডিয়াটি কি ভালো কি না, সেটা আপনি বুঝবেন কিভাবে?

এর দুটো অপশন আছে।

১। কনসাল্টেন্সি: আপনি চাইলে আপনার বিজনেস আইডিয়াটি কোন একজন কনসাল্টেন্ট কে বলে তার থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। বাংলাদেশে অনেক কনসাল্টেন্ট আছেন, যারা আপনাদের বিজনেস আইডিয়া খুব অল্প সময়ে এবং খুব অল্প খরচে ভ্যালিডেট করে দিতে পারবেন!

২। মার্কেট যাচাই: আপনার আইডিয়া বা প্রোডাক্ট যদি একেবারেই নতুন হয়, তবে এই ধাপ আপনার জন্য নয়। নইলে, আপনি চাইলে বিদেশি কিংবা দেশি কোম্পানিগুলো, যারা কাছাকাছি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে, তাদের নিয়ে আইডিয়া করে নিতে পারেন।

জেনে নিতে পারেন, তারা কেমন লাভ করছে, কিংবা তারা কিভাবে বিক্রি করা শুরু করেছেন। তাদের বিজনেস মডেল নিয়েও ধারণা করতে পারবেন ঠিকঠাকমতো ঘাঁটাঘাঁটি করলে।

এতে আপনার আইডিয়াটি ভালো কি না সেটা তো বুঝবেনই, একইসঙ্গে বুঝে ফেলবেন আইডিয়াটি নিয়ে কিভাবে আগাবেন!

স্টার্টআপ গড়ে তোলার ধাপগুলো কী কী

এখানে টেবিল অফ কন্টেন্টস টা দিয়ে ফেলবেন।

ধাপ #১: স্টার্টআপ শুরুর আগে আপনাকে যা যা চিন্তা করতে হবে

স্টার্টআপ শুরুর আগে আপনার যা যা চিন্তা করা লাগবে:

টার্গেট কাস্টমার:

টার্গেট কাস্টমার বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়, যাদের আপনার পণ্য বা সেবা নেবার আগ্রহ এবং সামর্থ্য দুইটাই আছে। আমাদের অনেক সময়ই অনেক দামী জিনিস কেনার ইচ্ছা হলেও, আমরা তা কিনতে পারিনা সামর্থ্য না থাকার কারণে। তাই, সেই দামী ব্র্যান্ডগুলোর টার্গেট কাস্টমার আমরা না।

আপনার টার্গেট কাস্টমার ঠিক করার সময় নিচের জিনিসগুলো লিখে ফেলুন:

  • বয়স
  • লিঙ্গ
  • লোকেশন
  • ইনকাম লেভেল
  • প্রফেশন

এবার, আপনি যখন আপনার পণ্য বা সেবার মান, কিংবা দাম নির্ধারণ করবেন, তখন এই লেখাটার সঙ্গে মিলিয়ে নিন। দেখুন, দাম কিংবা মানের সঙ্গে আপনার কাস্টমারদেরকে মানাচ্ছে কি না।

কাস্টমার পার্সোনা:

আপনি আপনার টার্গেট কাস্টমার এর একটি চরিত্র কল্পনা করুন। সে কোন একটি পণ্য কেন কিনে, কোন ডিসিশন কেন নেয়, তার সমস্যা কী কী এসব প্রশ্ন করে সেগুলার উত্তর বের করার চেষ্টা করবেন। একটি পার্সোনা তৈরি করতে আপনি নিজেকে যেসব প্রশ্ন করতে পারেন:

  • তাদের পছন্দ কী?
  • তারা কী কী সমস্যার সমাধান খুঁজছে?
  • মার্কেটের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তারা কিভাবে জানতে পারে?
  • তারা সাধারণত কী ধরনের পণ্য বা সেবা নিয়ে থাকে?
  • কোনকিছু ক্রয় করার সময় তারা কি দামের বিষয়টা মাথায় রাখে?

আপনারা চাইলে হাবস্পটের এই কাস্টোমার পার্সোনা বানানোর টুলটি ব্যবহার করতে পারেন।

মার্কেট অ্যানালাইসিস:

এর মাধ্যমে আপনি অপনার স্টার্টআপ এর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন। টার্গেট কাস্টমারদের বাজারে আচরণ কিরকম, আপনার কম্পিটিটর কারা, মার্কেটের ট্রেন্ড কী, পণ্যের চাহিদা সহ বিভিন্ন ডাটা আপনি মার্কেট এনালাইসিস থেকে পাবেন যা আপনাকে আপনার স্টার্টআপ এর যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

নিচের বিষয়গুলোও আপনাকে চিন্তা করতে হবে:

  • আপনার আইডিয়াল কাস্টমার এর মার্কেট কত বড়?
  • তাদের আর্থিক অবস্থা কেমন?
  • তাদের কেনাকাটার ধরণ কেমন, তারা কী কী যাচাই করে পণ্য কেনে?
  • ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড কী?
  • মার্কেটে কী ধরনের পণ্য মানুষ কিনছে?

ধাপ #২: স্টার্টআপ এর নাম ঠিক করুন

একটি স্টার্টআপ এর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে স্টার্টআপটির নাম। চলুন দেখে নিই স্টার্টআপ এর নাম কিভাবে ঠিক করবেন:

১। প্রথমে, আপনার কিছু আইডিয়া লিখে ফেলুন। ভালো হয় নামটি যদি কম শব্দের, সৃজনশীল এবং মনে রাখার মত হয়। চাইলে এই বিজনেস নেম জেনারেটটির সাহায্য নিতে পারেন।

২। এবার, হোস্টিং প্রোভাইডার এ গিয়ে দেখুন, যে আপনি যে নামের আইডিয়া গুলো লিখেছেন, এর কাছাকাছি ডোমেইন নেম কি অ্যাভেইলেবল কি না। প্রয়োজনে বিজনেসের নামের পাশে bd জাতীয় কিওয়ার্ড ইউজ করতে পারেন।

৩। যদি অ্যাভেইলেবল থাকে, তবে আপনি সে নামটাকে শর্টলিস্ট করে ফেলুন।

৪। এবার, সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখুন যে এই নামেরই অন্য কোন বিজনেস আছে কি না। যদি না থাকে, তবে আপনি আপনার পার্ফেক্ট নাম পেয়ে গিয়েছেন!

৫। কিন্তু, যদি একই নামে অন্য বিজনেস থাকে, তবে আরেকটু ভালোভাবে সবগুলো নাম লক্ষ্য করুন। এবার ভালোমতো দেখবেন যে অন্য পেজগুলো ঠিক কতটুকু বড়, বা কত বেশি পরিমাণে মানুষ সেই পেজগুলো ব্যবহার করছে। যদি দেখতে পান যে অন্য বিজনেস গুলো খুবই বড়, তবে হয়তো আপনার অন্য কোন নাম ঠিক করাই ভালো হবে।

ধাপ #৩: বিজনেস প্ল্যান বানান

আপনি যখন আপনার বিজনেস এর জন্য বিনিয়োগ খুঁজতে যাবেন তখন ইনভেস্টররা আপনার বিজনেস প্ল্যান দেখতে চাবে। একটি সুন্দর এবং অর্গানাইজড বিজনেস প্ল্যান আপনাকে বিনিয়োগ পেতে সাহায্য করবে।

আসুন আমরা জেনে নেই কিভাবে আপনি একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করতে পারেন:

কোম্পানি ডেসক্রিপশন: আপনার বিজনেস প্ল্যান এর এই অংশটাতে দু্টি প্রশ্নের উত্তর থাকতেই হবে।

১. আপনি/আপনারা কারা?

২. আপনার কোম্পানির গোল কী?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার কোম্পানির ডেস্ক্রিপশন এ থাকলে বেশ কয়েকটা বিষয় মানুষের কাছে ক্লিয়ার হবে। আপনি কেন এই বিজনেস করছেন, আপনি কেনো অন্যদের থেকে আলাদা, ইনভেস্টররা কেনো আপনার বিজনেস এর উপর বিনিয়োগ করবে। এখানে আপনি আরো যেসব জিনিস উল্লেখ করতে পারেন:

  • বিজনেস স্ট্রাকচার (বিজনেসটি কি আপনার একারই, নাকি অন্য কেউ রয়েছে আপনার সঙ্গে। থাকলে, পার্টনারশিপটি কেমন)
  • বিজনেস মডেল, বা বিজনেসটি চলছে কিভাবে।
  • বিজনেসটি কোন ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে।
  • আপনার বিজনেস এর মিশন ও ভিশন।
  • আপনার বিজনেস এর লং টার্ম এন্ড শর্ট টার্ম অবজেকটিভ।

মার্কেট অ্যানালাইসিস: ধাপ ১ এ আপনি যেগুলো সিলেক্ট করেছেন, সেগুলো এখানে লিখে ফেলুন!

পণ্য অথবা সেবা এর তালিকা: পণ্য বা সেবা আপনার বিজনেস প্ল্যান এর মূল অংশ। আপনার পণ্য এর পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে কিছু সাধারণ তথ্য দিতে পারেন আপনার পণ্য সম্পর্কে। আর পণ্য বা সেবা এর পরিমাণ কম হলে বিস্তারিত লিখুন। সাধারণত, ইনভেস্টররা আপনার কাছে বিস্তারিত তথ্যই চাইবে।

কাস্টমার সেগমেন্টেশন: ধাপ ১ এর টার্গেট কাস্টমার থেকে এখানে তথ্য নিয়ে লিখে ফেলুন!

মার্কেটিং প্ল্যান: আপনার বিজনেস প্ল্যান এর মধ্যে একটি বিস্তারিত মার্কেটিং প্ল্যান থাকা খুবই জরুরি। মার্কেটিং এর অভাবে প্রচুর বিজনেস শুরু করার আগেই থেমে যায়। এবং, যেহেতু আপনি স্টার্টআপ তৈরি করবেন, অর্থাৎ, আপনার ব্র্যান্ড এর নাম কেউ এখনো জানেনা। কাজেই, আপনার অন্য সবার থেকে বেশি মার্কেটিং করা প্রয়োজন।

মার্কেটিং প্ল্যান লেখার জন্য সাধারণ 4P এর সাহায্য নেয়া হয়। এই 4P হল:

  • Product (পণ্যের ফিচার কি কি)
  • Place (আপনি পণ্য কোথায় বিক্রি করবেন?)
  • Price (পণ্যের দাম কেমন হবে?)
  • Promotion (পণ্যের প্রচার কিভাবে করবেন?)

লজিস্টিক এবং অপারেশন প্ল্যান: আপনার ব্যবসায়ের কাজকর্ম কিভাবে হবে, এই সেকশনে আপনি এটি লিখবেন। এই সেকশনে আপনি যা যা রাখতে পারেন:

  • সাপ্লায়ার (যদি পণ্যের কাঁচামাল দরকার হয়, সেগুলো কাদের থেকে নিচ্ছেন?)
  • প্রোডাকশন (পণ্য উৎপাদন কিভাবে হবে?)
  • শিপিং (কাস্টমারদের কাছে আপনি আপনার পণ্য কিভাবে পৌছাবেন?)
  • ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট (পণ্য সংরক্ষণ কিভাবে করবেন?)

ধাপ #৪: সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজনেস পেইজ তৈরি করুন

সোশ্যাল মিডিয়া বলতে, আমি এখানে মূলত ফোকাস করব তিনটি সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরে: ফেসবুক, ইউটিউব, এবং টিকটক।

এটা অবশ্যই আপনার নির্দিষ্ট ব্যবসায় এর পদ্ধতির উপর নির্ভর করবে, যেমন আপনার মডেল B2B হলে (মানে আপনি অন্য ব্যবসায়ের কাছে পণ্য বিক্রি করেন, সাধারণ মানুষের কাছে করেন না) আপনি লিংকডইন এর উপরে ফোকাস করতে পারেন। কিংবা আপনার টার্গেট অডিয়েন্স যদি হয় নতুন জেনারেশনের মানুষজন, তবে আপনি ইনস্টাগ্রাম কে টার্গেট করতে পারেন।

তবে, ফেসবুক, ইউটিউব এবং টিকটক, এই তিনটি প্ল্যাটফর্ম এ আপনি সবচেয়ে বেশি মানুষ কে রিচ করতে পারবেন।

যেভাবে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করবেন:

১। প্রোফাইলের প্রয়োজনীয় সবরকমের ডাটা দিন, স্পেশালি প্রোফাইল পিকচার, কভার ফোটো, কন্ট্যাক্ট ডিটেলস, এবং ওয়েলকাম পোস্ট। এগুলো তৈরি না করে কখনোই সোশ্যাল মিডিয়ায় আউটরিচ শুরু করবেন না।

২। কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ওপরে ফোকাস দিন। বর্তমানে প্রচুর কন্টেন্ট ক্রিয়েশন টুল পাবেন যা দিয়ে বেশ ভালো কন্টেন্ট তৈরি করা যায়, যেমন ক্যানভা, এআই টুল। তবে টুলের সাহায্যে যা কিছুই করুন না কেন অবশ্যই নিজে চেক করবেন, প্রয়োজনে টেক্সটগুলো এডিট করবেন বা দক্ষ কাউকে দিয়ে এডিট করাতে পারেন

৩। নতুন যত ট্রেন্ড আছে, স্পেশালি মিম এবং ফেস্টিভ্যাল, এই ট্রেন্ড গুলো ফলো করে কন্টেন্ট তৈরি করুন। এই কন্টেন্ট আপনাকে এনে দিতে পারে প্রচুর পরিমাণে অর্গ্যানিক রিচ, যা অন্যভাবে পাওয়া বেশ কঠিন।

৪। একটি নির্দিষ্ট সময়ে পোস্ট করুন সবসময়। প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়াতেই এমন একটি সময় নির্ধারণ করুন। সাধারণত, সন্ধ্যা সাতটা কন্টেন্ট পাবলিশ করার সবচেয়ে ভালো সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এই সময়টা মেইনটেইন করুন। তাহলে, আপনার ফলোয়ার রা একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার সঙ্গে এনগেজ করার সুযোগ পাবে, যা লং টার্মে আপনাকে একটি কনসিস্টেন্সি এনে দিতে পারে।

৫। আপনার অডিয়েন্সের সঙ্গে এনগেজ করার চেষ্টা করুন। আপনার অডিয়েন্স এর কথা শুনুন, তাদের ফিডব্যাক নিন। একটি স্টার্টআপ হিসেবে আপনি আপনার অডিয়েন্সের ওপরে অন্যান্য ব্যবসায় এর চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরশীল থাকবেন। তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করুন।

৬। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি অর্গ্যানিক রিচ খুব বেশি নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফেইসবুক এড, গুগল এড, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর মাধ্যমে ট্র্যাফিক জেনারেট করুন। শুরুতে আপনাকে মার্কেটিং এর পেছনে মোটামুটি বড় একটি অংকের টাকা খরচ করতেই হবে।

ধাপ #৫: কম্পিটিটর রিসার্চ, কম্পিটিটর রিসার্চ, কম্পিটিটর রিসার্চ

কম্পিটিটর রিসার্চ আপনার সম্পূর্ণ স্টার্টআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

আপনার স্টার্টআপ টি পণ্য বেজড হয়ে থাকলে, সম্ভাবনা আছে আপনার ব্যবসায়ের কোন ডিরেক্ট কম্পিটিটর নেই।

এমন ক্ষেত্রে, কাছাকাছি পণ্য বা সেবা যারা বিক্রি করছে, তাদেরকে লক্ষ্য করুন।

কিন্তু লক্ষ্য করে আসলে কী করবেন? আর করবেনই বা কিভাবে? চলুন দেখে নিই:

১। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি: কাস্টমার দের সঙ্গে কথা বলুন। আপনি যে ইন্ডাস্ট্রি তে কাজ করবেন বা যে সমস্যাই সমাধান করুন না কেন, আপনার ক্রেতারা অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান অন্য কোন পণ্য দিয়ে করছে। তাদের থেকে এই তথ্যগুলো নিন।

২। লিংকডইন এ “সিমিলার পেজ” ব্যবহার করুন। লিংকডইন এ পেজ খুললে, বা কোন পেইজ এ লাইক দিলে, লিংকডইন আপনাকে একই ইন্ডাস্ট্রির বা ধরনের পেইজ এর সাজেশন দিবে। এই পেইজ গুলোকে নোট করুন।

৩। কিওয়ার্ড রিসার্চ করুন। আপনার ব্যবসায়ের রিলেটেড যত কিওয়ার্ড আছে, তাদের ডাটা Semrush বা এই জাতীয় কোন একটি টুল দিয়ে বের করুন। এরপরে দেখুন সেই কিওয়ার্ডের রেজাল্টে অন্য কোন কোন কোম্পানি রয়েছে। এদের একটি লিস্ট করে ফেলুন।

৪। এবার, নিজেকে আপনার পণ্যের ক্রেতা হিসেবে ভেবে দেখুন একবার, আপনি কোন কোম্পানির পণ্য কিনতেন।

৫। SWOT অ্যানালাইসিস করুন। Strengths, Weaknesses, Opportunities, Threats, এই চারটি মিলিয়ে SWOT অ্যানালাইসিস। আপনার কোম্পানির দক্ষতা কোথায়, দুর্বলতা কোথায়, বাজারে কোন বিষয়টির সুবিধা আপনি নিতে পারবেন, কোন বিষয়টি আপনার জন্য ক্ষতিকর, সব মিলিয়ে একটি লিস্ট তৈরি করুন।

৬। সবশেষে, কম্পিটিটিভ গ্রিড তৈরি করুন। কম্পিটিটিভ গ্রিড হল একটি ছক, যেখানে আপনি এই সমস্ত তথ্য আপনার নিজের স্টার্টআপ এর সঙ্গে তুলনা করবেন।

এই কম্পিটিটিভ গ্রিডটিই আপনার কম্পিটিটর রিসার্চের প্রধান ডকুমেন্ট। এই ডকুমেন্ট টি আপনি যেভাবে ব্যবহার করতে পারেন:

১। নিজেদের অভ্যন্তরীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন।

২। পিচ ডেক এ এই তথ্য দিতে পারবেন।

৩। আপনার কম্পিটিশন এর সমস্ত প্ল্যান বুঝতে পারবেন। তাদের থেকে এগিয়ে থাকতে তাদের পরিকল্পনা বোঝার কোন তুলনা নেই।

৪। ইনভেস্টরদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনি যদি অনেক এগিয়ে থাকেন, তবে আপনি বড় ইনভেস্টরদের কাছে যেতে পারবেন। যদি পিছিয়ে থাকেন, তবে ইনভেস্টর দের কাছে যাওয়া স্মার্ট ডিসিশন হবে না। তখন আপনি আপনার স্টার্টআপ এর আইডিয়ার উপরে কাজ করে, আইডিয়াটাকে আরো বেটার করার চেষ্টা করবেন।

ধাপ #৬: আপনার ইউএসপি (মানুষ কেন আপনার পণ্য কিনবে) প্রস্তুত করুন

উপরের কম্পিটিটিভ গ্রিড টি যদি আপনি ঠিকভাবে করতে পারেন, তবে এই ধাপ টি আপনার জন্য পানির মত সহজ হয়ে যাবে।

ইউএসপি, বা Unique Selling Proposition হচ্ছে আপনি আপনার কম্পিটিটর থেকে কোন সুবিধাটা বাড়তি দিচ্ছেন। ইউএসপি বেশ কয়েক রকমের হতে পারে, নিচে তার লিস্ট দেয়া হল:

১। আপনার পণ্যের দাম মার্কেট প্রাইসের চেয়ে কম।

২। আপনার পণ্য আপনার ডিরেক্ট কম্পিটিটরদের বা কাছাকাছি পণ্য এর থেকে বেশি উন্নতমানের।

৩। আপনার পণ্য কেনা ক্রেতার পক্ষে বেশি সুবিধাজনক। হয়তো আপনার পণ্য তার বাসার পাশের দোকানে পাওয়া যায়, কিংবা আপনি তাকে সহজে বা ফ্রিতে ডেলিভারি দিচ্ছেন।

৪। আপনার পণ্য হয়তো কোন কারণে অভিনব, যেমন হয়তো আপনি কোন বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহার করছেন বা কোন নতুন প্রোসেস বা রেসিপি ব্যবহার করছেন।

অন্তত তিনটি বা চারটি ইউএসপি তৈরি করুন। তবে, কাজ এখানেই শেষ নয়। এই ইউএসপি গুলো হয়তো আপনার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, তবে তা ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় মনে নাও হতে পারে। এটা বোঝার একমাত্র উপায় টেস্টিং।

আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন অ্যাড ক্যাম্পেইন চালাবেন, তখন একেক ক্যাম্পেইন এ একেকটি ইউএসপি ব্যবহার করুন। দেখুন, আপনার অডিয়েন্স কোনটার সঙ্গে বেশি এনগেজ করছে।

এরপরে, সবচেয়ে সফল ইউএসপি টা সিলেক্ট করে ফেলুন, এবং সেটা দিয়েই আপনার মার্কেটিং এর প্রধান ক্যাম্পেইন রান করুন!

ধাপ #৭: কো-ফাউন্ডার দের সঙ্গে একটি ক্লিয়ার চুক্তি করুন

আমার কোন স্টার্টআপই আমি একা শুরু করিনি৷

সম্ভাবনা আছে আপনিও আপনার স্টার্টআপ একা শুরু করবেন না।

স্টার্টআপ এ কো-ফাউন্ডার থাকা প্রয়োজনীয়। কো-ফাউন্ডাররা অনেকভাবেই আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

সেটা আর্থিক হতে পারে, অভিজ্ঞতা দিয়ে হতে পারে, কিংবা তাদের ফিজিক্যাল প্রেজেন্স দিয়েও হতে পারে।

কিন্তু, এদের সঙ্গে আপনার, এবং আপনার স্টার্টআপ এর সম্পর্ক ঠিক কতটুকু, তা একটি লিখিত চুক্তির মাধ্যমে আগেই পরিষ্কার করে ফেলুন। যেসব জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন:

১। আপনি এবং আপনার কো-ফাউন্ডাররা কী পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করছেন।

২। সকল কো-ফাউন্ডারের দায়িত্ব কী কী।

৩। লাভ এবং ক্ষতি কিভাবে ভাগ করে নেয়া হবে।

৪। প্রতি পার্টনার ঠিক কতটুকু দায় বহন করবে (যেমন, কোন একটি ক্ষেত্রে একজন পাওনাদার হুট করেই আপনার কাছে তার পাওনা টাকা চেয়ে বসল। তখন আপনি বা আপনার কো-ফাউন্ডার ঠিক কতটুকু পরিমাণে টাকা পরিশোধ করবেন)।

৫। কো-ফাউন্ডারদের মধ্যে কোন ঝগড়া বা বিবাদ হলে তার মীমাংসা কিভাবে হবে।

বিজনেস সাধারণত তিন ধরনের হয়:

  • একমালিকানা, বা আপনার একার বিজনেস আপনি একাই চালাবেন
  • অংশীদারি, বা আপনারা কয়েকজন মিলে বিজনেস চালাবেন
  • এবং কোম্পানি, যেটা বড় পরিসরে অনেকে মিলে চালাবে

এর মধ্যে একমালিকানার রেজিস্ট্রেশন আপনি একাই করতে পারেন। কিন্তু, যদি অংশীদারি বা কোম্পানি গঠন করতে চান, তবে আপনাকে আইনের সাহায্য নিতে হবে।

এই ধরনের রেজিস্ট্রেশন নিজে নিজে না করাই ভালো!

তবে, আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি চুক্তির নমুনা দেয়া হল, যা দিয়ে আপনি আপনার কো-ফাউন্ডার দের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারবেন!

এই লিংকে ক্লিক করলে আপনি বাংলাদেশি অংশীদারি ব্যবসায়ের চুক্তিনামার একটি নমুনা ডাউনলোড করতে পারবেন: অংশীদারি চুক্তিনামা।

যদি কোম্পানির গঠনের চুক্তি নিয়ে ধারণা করতে চান, তবে চলে যান এই লিংকে: লিমিটেড কোম্পানির দলিল

আর কোম্পানি গঠন করতে চাইলে নিচের লিংকটায় চলে যেতে পারেন: কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া

আর ব্যবসায়ের কাগজপত্র নিয়ে ধারণা পেতে চাইলে চলে যান এই লিংকটিতে!

ধাপ #৮: স্টার্টআপ ফাইন্যান্সিং নিয়ে পরিকল্পনা করুন

ফাইন্যান্সিং হল আপনার স্টার্টআপ এ অর্থের যাওয়া আসা। অর্থাৎ, আপনি যে প্রজেক্ট বা বিজনেস চালু করছেন, সেখানে টাকা কিভাবে আসবে, এবং এই টাকাটা খরচ কিভাবে করবেন।

ফাইন্যান্সিং এর জন্য আপনাকে শুরুতেই যে কাজটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে একটি ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যান বানানো। আসুন, আমরা দেখি কিভাবে ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যান বানাব:

১। খরচের লিস্ট: আপনার সমস্ত খরচগুলোর একটি লিস্ট করে ফেলুন। এর মধ্যে এককালীন খরচ, যেমন সরঞ্জাম বা অফিসের জায়গা নেয়ার খরচের সঙ্গে চলমান খরচ, যেমন বেতন, ভাড়া এবং বিল, এগুলোও লিখুন।

আপনি যদি শিওর না হন যে আপনার সমস্ত খরচ কত হবে। প্রতিটি খরচের জন্য একটি রেঞ্জ অনুমান করে লিখে নিন। এটি আপনাকে পরে একটি রিয়েলিস্টিক বাজেট বানাতে সাহায্য করবে।

২। সেলস টার্গেট: আপনি আপনার খরচ গুলো জেনে ফেললে, আপনার প্রয়োজনীয় আয়ের পরিমাণ বুঝে ফেলতে পারবেন।

যেমন ধরুন, আপনার সমস্ত খরচ মিলিয়ে যাবে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা, আপনার পাইলট টেস্টিং এর সময় ছয় মাস, অর্থাৎ মোট খরচ তিন লক্ষ টাকা।

এবার, আপনার প্রতি পণ্যে লাভ যদি এক হাজার টাকা হয়, তবে আপনাকে মোট তিনশোটি পণ্য বিক্রি করতে হবে, এটি আপনার মিনিমাম সেলস টার্গেট।

এরপর চাইলে একটি অ্যাম্বিশাস সেলস টার্গেট নিতে পারেন, যেমন ধরুন, আপনি যদি পাঁচশো বা তার ওপরে পণ্য বিক্রি কর‍তে পারেন, তবে অন্য একটি ব্রাঞ্চ খুলবেন!

৩। সেলস ফোরকাস্ট: সেলস ফোরকাস্ট হল, আপনি যে মার্কেট অ্যানালাইসিস করলেন, তার ভিত্তিতে বানানো একটি অনুমান, যে আপনি কী পরিমাণে পণ্য আসলে বিক্রি করতে পারবেন।

আপনার পাইলট ছয় মাসে আসলে কী পরিমাণে পণ্য বিক্রি করতে পারবে, এটার একটি ছোট্ট অনুমান আপনাকে একটি রিয়েলিস্টিক আইডিয়া দিতে পারে মার্কেটের।

৪। বাজেট: বাজেট কিছুই না, আপনি এর আগের ধাপগুলোয় যা যা ঠিক করলেন, এগুলো সব একসঙ্গে লিখে ফেলুন। সমস্ত ব্যয়, সমস্ত আয়, সবকিছু দুটি কলামে লিখে ফেলবেন।

এবার, এই বাজেট টি কোন একজন প্রোফেশনাল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট কে দেখান। বাজেটিং কঠিন, কিন্তু এটাকে আপনার সঠিকভাবে করতেই হবে। এর জন্য পেশাদারদের সাহায্য নেয়া অনেক ক্ষেত্রেই স্মার্ট হবে।

একজন প্রোফেশনাল প্ল্যানার আপনাকে আপনার সব অল্টারনেটিভ বুঝতে এবং আপনার ব্যবসার জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। তারা আপনাকে একটি বাজেট তৈরি করতে এবং সময়ের সাথে সাথে আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করতেও সহায়তা করবে।

আপনার যদি প্রোফেশনাল দের সাহায্য প্রয়োজন নাও হয়, তবুও অন্তত ব্যবসায়ী কাউকে বাজেটটি অবশ্যই দেখিয়ে ডাবল চেক করে নেবেন। কারণ পরে যখন ইনভেস্টরদের কাছে যাবেন, তারা এই বাজেটটি খুবই খুঁটিয়ে দেখবে। এখানে বড় কোন খুঁত থাকলে আপনার বিনিয়োগ পাবার আশা একেবারেই নেই।

ধাপ #৯: পাইলট প্রজেক্ট কী এবং কেন পাইলট প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করবেন

আপনি স্টার্টআপ এ শুরুতেই কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে যাবেন না।

এর কারণ দুইটি। প্রথম কারণ, আপনার কাছে কোটি কোটি টাকা নেই। দ্বিতীয় কারণ, আপনার আইডিয়াটা বাজারে টেস্ট করা হয়নি।

কাজেই, আপনাকে বাজারে ছোট, খুবই ছোট পরিসরে আইডিয়াটা টেস্ট করতে হবে। এই টেস্টিং টাকে সাধারণত পাইলট প্রজেক্ট বলা হয়। তবে, অনেকে অনেক নামেই ডাকতে পারে ব্যাপারটাকে।

এই পাইলট প্রজেক্ট আপনার স্টার্টআপ এ ফান্ডিং সিকিওর করতে এবং স্টার্টআপ এর প্রফিটেবিলিটি বুঝতে প্রচুর সাহায্য করবে আপনাকে। আমাদের সব স্টার্টআপ এই আমরা ছোট পরিসরে পাইলট প্রজেক্ট রান করি।

পাইলট প্রজেক্ট যেভাবে রান করবেন:

১। প্রথমেই আপনাকে গোল সেট করতে হবে। আপনি পাইলট প্রজেক্ট টা থেকে আসলে কী আশা করছেন।

সাধারণত, আমার পাইলট প্রজেক্ট গুলোর লক্ষ্য থাকে প্রফিটেবিলিটি সেট করা। অর্থাৎ, আমি ঠিক কত পার্সেন্ট প্রফিট তুলতে পারব সেটা বের করা।

কাজেই, আমি গোল সেট করি লাভ নিয়ে। ২০% প্রফিট, বা ৩০% প্রফিট জেনারেশন আমার গোল।

২। এবার, একটি টাইমলাইন সেট করুন। আপনি ঠিক কতদিন পাইলট প্রজেক্টটি চালাবেন। সাধারণত, একটি পাইলট প্রজেক্টের সময় হয় তিন থেকে চার মাস।

কিন্তু আপনার যদি মনে হয় আপনার এই সময়ে হয়তো হবে না, তবে আপনি চাইলে ছয় মাসও রান করতে পারেন। এরচেয়ে বেশি সময় রান না করাই ভালো।

৩। এবার আসি রিক্রুটমেন্ট এ। আপনার স্টার্টআপ এ হয়তো আপনি একা কাজ করবেন না। তাহলে আপনার কিছু কর্মচারী প্রয়োজন হবে।

কর্মচারীদের রিক্রুটমেন্টে প্রথমেই যেটা মাথায় রাখবেন, সেটা হচ্ছে কখনোই অনভিজ্ঞ মানুষকে নেবেন না। একটি স্টার্টআপ খুবই সেনসিটিভ। কোন বড় ধরণের ভুল একটি স্টার্টআপ কে খুব সহজেই ডুবিয়ে দিতে পারে।

এখানে যদি আপনি অনভিজ্ঞ কর্মচারী রিক্রুট করেন অল্প টাকা বা ফ্রি তে, তবে তা আপনার স্টার্টআপ এর ব্যর্থতার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।

কাজেই, খরচ বেশি হলেও, যদি আপনার নিজের আইডিয়ার উপরে বিশ্বাস থাকে, তবে স্টার্টআপ এ অভিজ্ঞ কর্মচারীদেরকে নিন।

৪। আপনার যে টিম টা তৈরি হল, এদেরকে এবার আপনাকে লিড করতে হবে। এই টিমের যত রিসোর্স প্রয়োজন, তা দেখতে হবে। তাদেরকে এই রিসোর্স দিতে হবে, তাদেরকে কাজের নির্দেশনা দিতে হবে। মোটিভেশন দিতে হবে।

৫। পাইলট প্রজেক্টের টাইমফ্রেমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:

(i) আরম্ভ (Initiation – First month)

(ii) কর্ম (Operation – 2-5 months)

(iii) নিয়ন্ত্রণ (Control – Last month)

যখন আরম্ভ করছেন, তখন তো শুরুই করলেন কাজ করা। এর পরে যতদিনই আপনার অপারেশন চালাবেন, প্রতি মাসে একবার করে ফিডব্যাক নেবেন।

কাদের ফিডব্যাক নেবেন? সবার। আপনার কর্মচারীদের, আপনার প্রাথমিক কাস্টমারদের। সম্ভব হলে সাধারণ মানুষের কাছে থেকেও তথ্য সংগ্রহ করুন।

বর্তমান বিশ্বে, তথ্যের কোন বিকল্পই নেই! সকলের থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। দেখুন, আপনার প্রজেক্ট কতজন মানুষ ভালো চোখে দেখছে।

ধাপ #১০: আপনার স্টার্টআপ কে কিভাবে ভ্যালুয়েট করবেন

আপনার পাইলট প্রজেক্ট কি বিনিয়োগকারীরা বা শেয়ারহোল্ডাররা ভালো চোখে দেখবে কি না, তা আপনি মাত্র পাঁচটি জিনিস দেখে নিজেই জেনে ফেলতে পারবেন। চলুন দেখে নিই সেই পাঁচটি জিনিস কী কী:

১। ফাউন্ডিং টিম: আপনার স্টার্টআপ এ যে টিম কাজ করছে, এই টিম এর উপর ইনভেস্টর এবং শেয়ারহোল্ডাররা প্রচুর পরিমাণে নজর রাখে। এমনকি, অনেক সময়ে বাকি চারটি দিক খারাপ হবার পরেও, শুধু এই একটি জিনিস দেখেই মানুষ বিনিয়োগ করতে রাজি হয়ে যেতে পারে!

আপনার টিম কে যদি আপনি বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে প্রেজেন্ট করতে চান, তবে নিচের বিষয়গুলোর ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন:

  • প্যাশন
  • অভিজ্ঞতা
  • ব্যক্তিগত যোগ্যতা
  • সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা

২। ROI: ROI হচ্ছে Return on Investment, বা আপনার ব্যবসায়ে কত টাকা বিনিয়োগ করে আপনি কত পার্সেন্ট লাভ করতে পারছেন। সাধারণত ROI একটি স্টার্টআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা, এটি দিয়ে সম্পূর্ণ স্টার্টআপ কে মূল্যায়ন করা হয়। কাজেই, ROI অপটিমাইজেশনের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন।

সাধারণত, একটি স্টার্টআপে ROI থাকা উচিত ৫-১০%। এর চেয়ে বেশি হলে আপনি অনেক ভালো অবস্থায় আছেন, এবং কম হলে আপনাকে আরো চেষ্টা করতে হবে আরেকটু ভালো ROI এর জন্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে ROI না হলে, স্টার্টআপটিকে আর ফান্ডিং এ না নিয়ে যাওয়াই ভালো।

৩। কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ: কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ হল আপনি কোন দিক দিয়ে আপনার কম্পিটিশনের চেয়ে এগিয়ে আছেন। যেকোন কিছুই কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ হতে পারে, যেমন পণ্যের কোয়ালিটি কিংবা আপনার সাপ্লাই চেইন, যার মাধ্যমে আপনি অন্যদের চেয়ে বেশি ভালো সেবা দিচ্ছেন।

৪। মার্কেট মোমেন্টাম: মার্কেট মোমেন্টাম হল আপনাকে কত দ্রুত মানুষ চিনছে, কিংবা আপনি কত দ্রুত মার্কেট এ জায়গা করে নিচ্ছেন। আপনি যত দ্রুত মার্কেট এ জায়গা করে নিতে থাকবেন, মানুষ বিনিয়োগের জন্য তত বেশি আগ্রহী হবে।

৫। মিশন: মিশন, বা উদ্দেশ্য হল আপনার স্টার্টআপ টি আসলে কেন এক্সিস্ট করছে। এখানে, সাধারণত মানুষ তাদের সমস্যা সমাধানের স্টেটমেন্ট দিয়ে থাকে। যেমন:

অ্যামাজন এর মিশন স্টেটমেন্ট হল: serve consumers through online and physical stores and focus on selection, price, and convenience.

এমন, আপনিও আপনার মিশনটিকে ভালোভাবে লিখুন, যেন আপনার ফোকাস টা ভালোভাবে বোঝা যায়। মানুষ আপনার মিশন বুঝতে পারলে, এবং তার সঙ্গে একমত হলে, তবেই আপনাকে বিনিয়োগ দেবে!

ধাপ #১১: কিভাবে বিনিয়োগ খুঁজবেন

পাইলট প্রজেক্ট গুলোয় আপনি সাধারণত চেষ্টা করবেন নিজেই কিংবা কাছের কোন মানুষের থেকে মূলধন নেয়ার। কিন্তু, আপনার পাইলট প্রজেক্ট যদি সফল হয়, তবে আপনাকে বাইরের মানুষের কাছে বড় অংকের বিনিয়োগ চাইতে হবে।

কারণ এই বিনিয়োগ ছাড়া আপনি বড় পরিসরে ব্যবসায় শুরু করতে পারবেন না।

তাহলে চলুন, দেখে নিই আপনার কাছে কী কী অপশন রয়েছে:

১। বন্ধু, পরিবার, কিংবা বন্ধুর পরিবার: আপনার আশেপাশের কেউ যদি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে থাকে, তবে আপনি অবশ্যই তাদের থেকে আপনার বিনিয়োগ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে, আপনাকে কম পরিমাণে লভ্যাংশ দিতে হবে, এবং আপনি পরিচালনার ক্ষেত্রেও ছাড় পাবেন।

২। বিজনেস লোন: আপনি সোজাসুজি ঋণই নিতে পারেন, যদি আপনার ব্যবসায়ের অবস্থা ভালো থাকে। ঋণের একমাত্র অসুবিধা হল আপনাকে ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। এছাড়া, ঋণ আপনার কাছে অবশ্যই ভালো একটি অপশন হতেই পারে।

৩। অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর বা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট: এরা প্রাইভেট ইনভেস্টর, যারা আপনার স্টার্টআপ টির মত স্টার্টআপ খুঁজে খুঁজে ইনভেস্ট করে। এদেরকে আপনার পিচ সাবমিট করে আপনি ফান্ডিং চাইতে পারেন!

৪। ক্রাউডফান্ডিং: বাংলাদেশে যদিও ক্রাউড ইনভেস্টমেন্টের আইডিয়া সেভাবে প্রচলিত না, আপনি তবুও চাইলে বিদেশি বা দেশি কোন গ্রুপের সহায়তা নিয়ে ক্রাউডফান্ডিং করতে পারেন!

৫। স্টার্টআপ ইনকিউবেটর: বাংলাদেশে রবি, গ্রামীনফোন, বিকাশের মত বড় বড় বেশ কিছু কোম্পানির ইনকিউবেটর প্রোগ্রাম রয়েছে, যারা ছোট স্টার্টআপ গুলোয় বিনিয়োগ করে থাকে এবং উদ্যোক্তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে থাকে। আপনি চাইলে এমন কোন একটি ইনকিউবেটরেও জয়েন করতে পারেন।

৬। সরকারি গ্র্যান্ট: বাংলাদেশি সরকারের বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট, আইডিয়া, স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর মত কিছু ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম রয়েছে বাংলাদেশে।

পরিশেষে

আপনি যদি এই বিশাল গাইডটি সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন, তবে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!

স্টার্টআপে যা যা প্রয়োজন হতে পারে, তার সবই আপনি জেনে ফেলেছেন!

তবে আর দেরি কেন! এখনই শুরু করে ফেলুন আপনার স্টার্টআপ! আর আমাদের কমেন্টে জানান আপনার স্টার্টআপ আইডিয়া বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।

Author

হাই! আমি তন্ময়, একজন ঢাকা ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট। আমি গত তিন বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ করছি। আমার নিজের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি রয়েছে, যারা মূলত ইউএস এর ক্লায়েন্ট দেরকে সার্ভিস দিয়ে থাকে।

মুরাদ খান (Murad Khan) এর ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আলাদা আগ্রহ আছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন। । কর্মজীবন শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে, পরে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন। নিজের চেষ্টায় অর্জন করেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন দক্ষতা। কাজ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী মানুষের জীবন মান উন্নয়নে। এই লক্ষ্যেই বিডি আইসিটি ক্লাবের প্রতিষ্ঠা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!