fbpx

জীবনের লক্ষ্য কীভাবে নির্ধারণ করবেন (সম্পূর্ণ গাইড)

জীবনের লক্ষ্য

একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই যে একটা নির্দিষ্ট বয়স – ধরলাম ত্রিশ, এই বয়সেই কেউ একজন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আর সফলতার সাথে জীবন উপভোগ করছে, অপরদিকে একই বয়সের আরেকজন স্বচ্ছল পরিবারের হয়েও জীবন নিয়ে দ্বিধায় ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে!

এমনটা কেন হয় বলুন তো? বুঝতে পেরেছেন হয়তো! সেটা হচ্ছে জীবনের লক্ষ্যর কারণে! জীবন তো কেটে যাবেই, কিন্তু সফলতা, মনের আনন্দ আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে জীবন তখনি কাটবে যদি আমি জীবনের লক্ষ্য জানতে পারি। তাহলে, আসুন দেখি জীবনের লক্ষ্য কি ও কীভাবে নির্ধারণ করবেন ও তার জন্য আর কোন কোন বিষয় জানা প্রয়োজন।

জীবনের লক্ষ্য কী

পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল ও বিখ্যাত আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা বলেছেন – মানুষের জীবনের লক্ষ্য হলো সুখের জন্য প্রচেষ্টা করা। এই একটি কথাই আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে সুখে বা আনন্দে থাকার চেষ্টা করা। আর এই আনন্দ বা সুখ তখনি আসবে যখন আমরা নিজেদের জীবনে উন্নতি সাধন করতে পারবো, পাশাপাশি অপরের সুখের জন্য কাজ করব।

লক্ষ্য বিষয়ক সেরা কিছু উক্তি দেখুন এখানে

সীমিত এই জীবনে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জীবনধারণের মাধ্যমে সুখে থাকাই হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য। একটি সুন্দর জীবনের জন্য প্রতিটি মানুষেরই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা খুবই প্রয়োজন।

জীবনের লক্ষ্য কেন স্থির করা উচিত

জীবনের লক্ষ্য স্থির করা উচিত কারণ –

  • লক্ষ্য স্থির করে কাজ করে যাওয়ার মাঝেই আছে সার্থকতা
  • সময়ের অপচয় হয়না
  • আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে কারণ আমি জানি আমি সঠিক পথে আছি
  • “পরিশ্রমের সুফল একদিন পাবো” এই অনুভুতিটা মনের জোর বাড়িয়ে দেয়
  • অন্য কারো কাজ বা কথা দ্বারা দিকভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা

সুতরাং, এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার গুরুত্ব কতখানি অর্থপূর্ণ জীবনের জন্য।

এই এক জীবনে আমাদের অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়, যেমন – লেখাপড়া করা, স্বাধীন-চিন্তার ব্যক্তি হওয়া, পরিবারের সাথে মিলেমিশে থাকা, সমাজে সম্মান নিয়ে চলা, ধর্মবোধ নিয়ে থাকা ও পেশাগত পর্যায়ে উৎকর্ষ সাধন করা। কখনো আমাদের একই সময়ে একের বেশি ধাপ পার করতে হয়।

আমি চাই বা না চাই, ছোট থেকে আমাকে এই সকল ধাপ পর্যায়ক্রমে পার করতেই হবে। আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য স্থির করতে হয় লক্ষ্য। আর তাই, জীবনে লক্ষ্য থাকতে হয় বেশ কয়েকটি। সেই হিসেবে জীবনের লক্ষ্যের প্রকারভেদ হলো:

ক. ব্যক্তি জীবনের লক্ষ্য

এই ক্ষেত্রে লক্ষ্য হতে পারে যে আমি নিজের মাঝে যত বেশি সম্ভব মানবীয় গুণাবলী আনতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উত্তম চরিত্রের মানুষ হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

খ. ছাত্র জীবনের লক্ষ্য

সকল শিক্ষার্থীর একটাই লক্ষ্য থাকে ভালো ফলাফল করা।

গ. পারিবারিক জীবনের লক্ষ্য

পরিবার আমাদের জীবনের সবচে বড় একটা অংশ। আমাদের নির্ভরতা ও শান্তির জায়গা। পরিবারের মানুষগুলোর সুখে দুঃখে পাশে থেকে তাদের সঙ্গ দেয়া ও প্রয়োজন পূরণ করা হতে পারে একটা সুন্দর জীবনের লক্ষ্য।

ঘ. সামাজিক জীবনের লক্ষ্য

ব্যক্তি, ছাত্র ও পরিবারের পাশাপাশি আমি একটা সমাজেরও অংশ। আর তাই সমাজে সফলতার সাথে বিভিন্ন প্রয়োজনে অংশগ্রহণ করে একটা সুন্দর ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়া হতে পারে সামাজিক জীবনের লক্ষ্য।

ঙ. ধার্মিক জীবনের লক্ষ্য

ধর্মবোধ মানুষের জীবনের খুব সংবেদনশীল একটি অনুভূতির জায়গা। সঠিক নিয়মে ধর্ম পালন করা হতে পারে ধার্মিক জীবনের লক্ষ্য।

চ. পেশাগত জীবনের লক্ষ্য

যতগুলো ধাপে জীবন চলতে থাকে, পেশাগত জীবন হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। দীর্ঘসময় লেখাপড়া করার পর একটাই উদ্দেশ্য থাকে আর তা হলো সঠিক পেশা নির্বাচন করা যেখানে আয় ও উন্নতি দুটোই হবে মনের মতো।

কখন জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত?

দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে যে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের সঠিক কোনো বয়স বা সময়সীমা নেই। যে মুহূর্তে একজন মানুষ নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হয় তখনি সে তার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে। যেহেতু পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক বেশি বৈচিত্র আছে, তাই সবার জন্য কোনো “একটাই উপযুক্ত” সময় নেই।

তবে হ্যা, কোন মানুষ কোন মানুষ যখন লেখাপড়ার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে, চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে শেখে, জীবন ও মৃত্যু নিয়ে ভাবতে শেখে তখনি তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। স্কুলজীবনের সময় থেকেই জীবনের লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনাটা শুরু করা উচিত।

জীবনের লক্ষ্য কিভাবে ঠিক করব

জীবনের লক্ষ্য কিভাবে ঠিক করবো এই জিজ্ঞাসা অনেকের মাথায়ই ঘুরতে থাকে। লক্ষ্য নির্ধারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে এখন যেহেতু আমাদের ধারণা পরিষ্কার, তাই এই অংশে আমরা জানবো কিভাবে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়।

প্রথম পদক্ষেপ: নিজেকে জানুন

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যেটা করতে হবে সেটা হলো আপনার ভেতরের বিশেষ গুণ খুঁজে বের করা। অনেকেই এই কাজটা করতে ব্যর্থ হয়। সাধারণত আমরা লক্ষ্য সেটাই স্থির করি যেটা অন্যদেরকে করতে দেখি অথবা যেটা অন্যরা করতে বলে।

যেমন অনেকেই বলবে – “এই পেশায় যেওনা, টাকা পয়সা নাই, ওই পেশায় যাও, অনেক টাকা পাবা!” এই কথা শুনে যারা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে সত্যতা যাচাই না করে, তারা অবশ্যই হতাশায় পরবে। কারণ তাদের জীবনের লক্ষ্য নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্থির করা হয়নি!

নিজেকে জানতে নিজের আবেগ, ভালো লাগা, খারাপ লাগা, ভালোবাসা, রাগ, সহনশীলতা, দূরদৃষ্টি ও চাপ নেয়ার ক্ষমতা গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, এই সব কিছু নিয়েই আমাদের পরিচয় তৈরী হয়। লক্ষ্য নির্ধারণে আমাদের নিজের এসব বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা ভীষণ জরুরি।

এই পদক্ষেপটি পূরণ করতে নিম্নের কাজটি গুরুত্বপূর্ণ:

বিশেষ ভালো লাগার ব্যাপার গুলি চিহ্নিত করুন

ব্যক্তি হিসেবে ভালো লাগার ব্যাপারগুলি মনোযোগের সাথে চিহ্নিত করতে হবে কারণ, এগুলো আমাকে ইশারায় বলে যায় – কোন দিকে আমি নির্ঝঞ্ঝাটভাবে কাজ করতে পারবো। আমি যখন আমার ভালো লাগার ক্ষেত্রেই নিজের পেশা নির্বাচন করবো, তখন কাজ করা অত্যন্ত আনন্দের ও সহজ হয়ে যাবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যার যে কাজটা করতে অনেক কম সময় লাগে এবং সেই কাজের গুণগত মান অনেক ভালো হয়, সেই কাজ দিয়েই তার লক্ষ্য স্থির করতে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে নিম্নের ভিডিওটি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: ভবিষ্যতে কোথায় পৌঁছাতে ইচ্ছা করে সেটা বুঝুন

এরপরে যেটা করণীয় সেটা হলো – নিজের মনের স্বপ্ন খোঁজা বা ভবিষ্যতে কি হতে ইচ্ছা করে সেটা বোঝা। এই যে “কিছু হতে ইচ্ছা করা” এটা অনেকটাই চারপাশের পরিবেশ নির্ভর। আমাদের শুরুটা হয় কাউকে দেখে বা কারো সম্পর্কে কোনো সফলতার গল্প শুনে।

আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে, যেমন কারো কারো নিজের মনেই ইচ্ছা জাগতে পারে, চা বাগানে কোনো ফ্যাক্টরিতে উচ্চপদে চাকরি করা। এটা সম্পূর্ণ তার নিজের ভালোলাগা থেকেই হতে পারে। কিভাবে পেশা নির্বাচন করবেন সে সম্পর্কিত একটি আলোচনা রয়েছে এই লিংকে- How to Choose the Right Career

তৃতীয় পদক্ষেপ: বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে জানুন

পেশাগত জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আমাকে অবশ্যই আমার লেখাপড়ার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পেশা নিয়ে ভাবতে হবে। লক্ষ্য নির্ধারণের আগে আমাকে জানতে হবে যে ব্যবসায় শিক্ষায় লেখাপড়া করে কোন কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়া যায়। যতো জানা থাকবে ততো সঠিক পেশা নির্বাচন করা সহজ হবে।

এই পদক্ষেপটি সম্পন্ন করতে নিম্নের তিনটি কাজ করা প্রয়োজন:

ক. বিভিন্ন বিষয়ে লেখাপড়া করা

যদি সঠিক পড়ালেখা বা গবেষণা না করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, কিছু দিন পরেই মনে হতে পারে যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম! আবেগ আর বাস্তবতা মিলিয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হয় আর এজন্যে প্রয়োজন বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা করা।

উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কারো যদি মনোবিজ্ঞানী হয়ে মানুষের মনের জগতের সমস্যার সমাধান দিতে ভালো লাগে বা এই দিকে ক্যারিয়ার গড়াটাই লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাকে অবশ্যই মনোবিজ্ঞান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি বাস্তবে যারা কাজ করছে তাদের সম্পর্কেও জানা জরুরি।

যদি কোনোভাবে এই লক্ষ্য অর্জন না হয় সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়া যায়, সেটাও ভাবতে হবে আর সেই বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।

খ. সিনিয়রদের পর্যবেক্ষণ করা

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য আমাকে অবশ্যই দেখতে হবে যারা আমার সিনিয়র, হোক সেটা লেখাপড়ার বিষয়ে কিংবা পরিবারে বা সমাজে, তারা কেমনভাবে জীবন অতিবাহিত করছে, জীবনের অর্জন নিয়ে তাদের প্রাপ্তি কেমন এসব জেনে বুঝে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। অনেক কিছুই তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ আছে।

গ. বিজ্ঞজনের মতামত নেয়া

লক্ষ্য যেটাই হোক, স্বপ্ন ও যোগ্যতা মিলে গেলে এরপরে উচিত বিজ্ঞজনের মতামত নেয়া। যদি আমার শিক্ষক হতে ইচ্ছা করে অথবা একজন সমাজসেবী, আমার উচিত হবে কয়েকজন শিক্ষক ও সমাজকর্মীর সাথে কথা বলা। এই কথা বলার মাধ্যমে জানতে হবে শিক্ষকতা বা সমাজসেবার বর্তমান অবস্থা, তাদের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি সম্পর্কে।

অভিজ্ঞ মানুষের সাথে কথা বললে বাস্তব ধারণা পাওয়া যায় যেটা লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চতুর্থ পদক্ষেপ: নীতিগত বিশ্লেষণ করা

আমি যা হতে চাই জীবনে সেটা কি শুধু আমার জন্যেই সঠিক নাকি আমার চারপাশের মানুষের জন্যেও মঙ্গলময় সেটাও ভেবে দেখতে হবে। যেমন অনেক অর্থ উপার্জন করতে যেয়ে যেন ভালো ও খারাপের পার্থক্য ভুলে না যাই। ব্যক্তি জীবনে যেটা ঠিক নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও সেটি ঠিক নয়।

সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া ভালো লক্ষ্য কিন্তু সেটা হতে যেয়ে অসদুপায় অবলম্বন করা কোনোভাবেই ঠিক নয়।

পঞ্চম পদক্ষেপ: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন

লক্ষ্য নির্ধারণে আমাকে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থাৎ, শুধু আজ নিয়ে ভাবলে হবে না, আমাকে আগামী দশ বা বিশ বছর পরের কথা ভেবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। জীবনে যেন অনিশ্চয়তা না আসে আর সময় ও মেধা সঠিক ভাবে খরচ করা যায় তার জন্যেই দীর্ঘমেয়াদে ভাবা জরুরি।

ষষ্ঠ পদক্ষেপ: দুর্বলতা থাকলে কাটিয়ে উঠুন

এই পর্যায়ে দেখতে হয়, যে লক্ষ্য আমি নির্ধারণ করলাম, সেটা অর্জনের জন্য বা সেই পথে যাওয়ার জন্য উপযোগী সকল দক্ষতা আমার আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে কিভাবে দক্ষতা অর্জন করব, সেটা পরিকল্পনা করে রাখা। মূল কথা হলো স্বপ্ন পূরণের পথে যেন কোনো দুর্বলতা আমার ভেতরে না থাকে।

দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নিবিড় গবেষণা, ফিল্ড ভিজিট ও এক্সপেরিমেন্ট যা দরকার করুন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়, সেখানেও অনুসন্ধান করে লক্ষ্য পূরণে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠুন।

এভাবে এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি। এই পদক্ষেপগুলি একটার পর একটা বাস্তবে রূপদান করাই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে যোগ্যতা।

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সম্ভাব্য ভুল

ক. আবেগকে প্রাধান্য দেয়া

লক্ষ্য নির্ধারণে একটা বড় ভুল হচ্ছে শুধু আবেগকে প্রাধান্য দেয়া। জীবনটা আমরা সবাই চাই আনন্দে ও দুশ্চিন্তাবিহীন কাটাতে কিন্তু তার জন্য হুট্ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবেনা। আবার নিজের লক্ষ্যের সাথে অন্যের লক্ষ্য মেলানো যাবেনা। একেকজনের কাজের ধারা ও উদ্দেশ্য একেক রকম হয়, মেলাতে গেলে শুধু শুধু জটিলতা বাড়বে।

খ. Procrastination বা দীর্ঘসূত্রতায় ভোগা

লক্ষ্য নির্ধারণের পর যে ভুলটি অনেক সময় আমরা করি তা হলো শুধু স্বপ্ন দেখে যাওয়া যে একদিন আমি বড় ব্যবসায়ী হবো, অনেক অর্থবিত্ত অর্জন করবো! কিন্তু সেজন্য যে প্রথমে সময় নিয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হবে, কাজ করতে হবে, সেটা করি দেরিতে অথবা হয়তো করিই না। আর এর মাশুল দিতে হয় পরে কারণ আমরা জানি সময় খুবই সীমিত আমাদের হাতে।

গ. হতাশ হওয়া

কখনো যদি দেখি যে লক্ষ্য স্থির করার পরে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে, হতাশ হওয়া যাবেনা। মনে রাখতে হবে যে কোনো অর্জনই সহজ না। যা অর্জন করা আমার লক্ষ্য সেখানে প্রতিবন্ধকতা আসবে, কখনো মনোবল কমে যেতে চাইবে, কিন্তু হাল ছাড়া যাবেনা। বিশ্রাম নেয়া যেতে পারে কিন্তু কাজ থামানো যাবেনা।

ঘ. মানিয়ে নিতে না পারা

অনেক গবেষণা আর পড়ালেখা করে জীবনের লক্ষ্য স্থির করেও দেখা যেতে পারে একটা সময় চারপাশে পরিবর্তন এসেছে। আমি যদি এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারি তাহলে কিন্তু সমস্যা। আমার খেয়াল রাখতে হবে যে মূল লক্ষ্য ঠিক রেখে চলার পথে যদি কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধন বা পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়, আমি সেটা গ্রহণ করবো।

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল শুধরানোর উপায়

সুন্দর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল হয়ে গেলে যা করতে হবে, তা হলো –

  • ভুল হয়েছে বোঝা মাত্র শুধরানোর উপায় খুঁজতে হবে
  • ভেঙে পড়া যাবেনা, “ভুল হতেই পারে” এটা নিজেকে বোঝাতে হবে
  • যত দ্রুত সম্ভব ভুল শুধরিয়ে আবার কাজে ফিরতে হবে
  • ভুলের কারণ জানতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে একই ভুল যেন দুইবার না হয়

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের একটি উদাহরণ

আমি যখন বিবিএ করছিলাম, ব্যক্তিগত জীবনের লক্ষ্য ছিল সবার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে নিজের ইগো কমিয়ে চলা। তখনও সুনির্দিষ্ট পেশাগত কোনো লক্ষ্য ছিলোনা। কিন্তু বিবিএর শেষের দিকে আগ্রহ পেলাম শিক্ষকতায়। মনে হতো চমৎকার এক পেশা যেখানে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাবে তরুণ প্রজন্মের সাথে।

এরপরে আমি খোঁজ নেয়া শুরু করলাম যে ক্যারিয়ার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা কেমন হবে আর সুযোগ সুবিধা ও যোগ্যতা কী কী লাগবে। বাসায় জানানোর পর যখন তারা বললো খুবই ভালো উদ্যোগ শুধু আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাও, মনে শক্তি পেলাম।

এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নোটিসগুলো দেখে বুঝে নিলাম আমাকে এমবিএ তে আরো ভালো রেজাল্ট করতে হবে আর গবেষণা করতে হবে। গবেষণা করে যে আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করতে হয় শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ারে সফলভাবে চলতে গেলে, এটা আগে জানা ছিল না।

এরপর সব কিছু পরিকল্পনা করে মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকি এমবিএ শেষ করে। দুই জায়গায় আবেদন করতেই হয়ে যায় এক জায়গায়। এরপর আজ তেরো বছর পার হয়ে গেলেও কখনোই ক্যারিয়ার বা পেশাগত জীবন নিয়ে কোনোদিন খারাপ লাগা আসেনি।

এর মূল কারণ আমি লক্ষ্য নির্ধারণে প্রাধান্য দিয়েছিলাম নিজের যোগ্যতা, ইচ্ছা ও আনন্দকে আর এর জন্য যেভাবে নিজেকে গড়ে তোলা দরকার, তা করেছি।

আজ যখন আমি ব্যক্তিজীবন ও পেশাগত জীবনের লক্ষ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে জীবন যাপন করছি, এটা আমার সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও সুন্দর একটা প্রভাব বিস্তার করে আছে।

সুতরাং, এই আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হলে, সারাজীবন ভুগতে হয় আর লক্ষ্য নির্ধারণ করার পরেই সেটা অর্জনে কাজ করে যেতে হয়।

আপনার কখনো জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে কোনো প্রশ্ন আসলে নিঃসংকোচে মন্তব্যে জানাবেন আপনার ইমেইল আইডি দিয়ে, আমি আমার তরফ থেকে আন্তরিক চেষ্টা করবো পরামর্শ দিতে।

Author

মুরাদ খান (Murad Khan) এর ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আলাদা আগ্রহ আছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবনে ভালো পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন। । কর্মজীবন শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে, পরে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন। নিজের চেষ্টায় অর্জন করেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন দক্ষতা। কাজ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী মানুষের জীবন মান উন্নয়নে। এই লক্ষ্যেই বিডি আইসিটি ক্লাবের প্রতিষ্ঠা।

1 thought on “জীবনের লক্ষ্য কীভাবে নির্ধারণ করবেন (সম্পূর্ণ গাইড)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!